২০২১ সালের পর  বাংলাদেশে আওয়ামীলিগ  কেমন থাকবে? তেলাপোকার মত টিকিয়া থাকবে, না দাপটের সাথেই থাকবে?
ঘরের ভিত, খুটি আর বেড়া যদি ঠিক থাকে, তবে তা ৭ মাত্রার ভুমিকম্পেও টিকে থাকতে পারে।না হলে সামান্য বাতাসেও তা খসে পড়ে।  ঠিক তেমনি এই পৃথিবীতে  কোন দেশ, দল, সভ্যতা কিন্তু বাইরের ষড়যন্ত্রের কারণে  ধংব্স হয় না।  সব কিছুই হয় আভ্যন্তরীন দুর্বলতার কারণে, ভীত, খুটি বা বেড়া  যদি দুর্বল হয়। বাইরের ঝড়/ষড়যন্ত্র পতন কে তরান্যবিত করতে পারে মাত্র। সিরাজের  পতন কি   ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের ফল ? নাকি আভ্যন্তরীন দুর্বলতার ফসল?।সেনা প্রধান অবিশস্ত, এটা যদি আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা না হয় তো কোনটা?  প্রধান সেনাপতি অবিশস্ত না হলে কি সেদিন সিরাজের পতন হত?
 এখন দেখা যাক, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলিগের  ভিত কি দুর্বল হয়ে পড়েছে দল হিসেবে, এতই কি দুর্বল যে দল টি অস্তিত্বের সংকটে? হ্যা, ঘটনা পর্যবেক্ষণে আমার তাই মনে হচ্ছে । কেন মনে হচ্ছে ?  
আমি বলছি না তিন তিনটা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে  পরাজিত হওয়ার কারণে আওয়ামীলিগ অস্তিতের সংকটে। আমি বলছি না, আগামি নির্বাচনে জনগণের ভোটে আওয়ামিলিগের ক্ষমতা  যাওয়ার কোণ সম্ভাবনা  নেই বলে আওয়ামীলিগ অস্তিতের সংকটে।
কেউ অস্তিতের সংকটে পড়লে  কিছু লক্ষন প্রকাশ পায়, যা দেখে বোঝা যায় যে সে খুব সংক্টে আছে । যেমন মানুষের জীবন যখন বিপন্ন হয়ে পড়ে তখন সে খড় কোটো ধরেও বাচার আশা করে ।
আওয়ামিলিগের আচরণে আমরা কি এরকম খড় কোটো আকড়ে ধরা দেখতে পাই?আপনি পান কিনা জানি না, আমি পাই কিন্তু। ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আওয়ামীলিগ নিজের অস্তিত্বের সংক্টে না ভোগলে কেন শায়খুল হাদীস আজিজুল হকের দলের সাথে চুক্তি করতে যাবে? আদর্শগত দিক থেকে অস্তিতের সংকটে না পড়লে কি বিপরীত আদর্শের  জাতীয় পার্টির সাথে জোট করে ?  অস্তিতের সংকটে না পরলে ধর্ম নিরপেক্ষ আওয়ামিলিগ  ইতিহাস হত ? নিরপেক্ষ আওয়ামিলিগ  ইতিহাস বলেই ত এখন চলছে জগা খিচুরি আওয়ামিলিগের সময়, ধর্ম নিরপেক্ষতা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর সমাজতন্ত্রের জগা খিচুরির আওয়ামিলিগের যুগ এখন। “বিপরীতধর্মী আদর্শের জগা খিচুরী” আওয়ামীলিগ কত দিন মানুষের কাছে উপাদেয় থাকবে, রাজনীতির বাজারে এর চাহিদা থাকবে? আর বাজারে চাহিদা না থাকলে একটা পন্য কত দিন  টিকে থাকবে বাংলাদেশের রাজনিতির বাজারে? শায়খুল হাদিস আর এরশাদের  সাথে চুক্তি যে সাময়িক কৌশল নয়, অস্তিতের সঙ্কটের প্রতিফলন, তার প্রমান ত বর্তমানের জগা খিচুরীর আওয়ামিলিগ।
আস্থাহীনতা কারণে অস্তিতের সংকটে পড়ে যখন মানুষ অন্যের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়, তখন কিন্তু সে অন্যের অযৌক্তিক শর্ত মেনে নেয় বা অযৌক্তিক, অসম্ভব প্রতিশ্রুতি দেয়। মইন মাসুদ আর ফরক্রুদ্দিনের সাথে সমজোতার নির্বাচনে দশ টাকা কেজি চাল, বিনা মুল্যে সার আর ঘরে ঘরে চাকরী, অসম্ভব এসব প্রতিশ্রুতি কি আওয়ামীলিগের অস্তিতের সংকটকেই প্রকট করে তোলে না? অস্তিতের সংকটে না পড়লে কি  আওয়ামীলিগ কে ১/১১ সরকারের সাথে সমজোতা করতে হত?
 এখন দেখা যাক আওয়ামীলিগের ভিত, খুটি আর বেড়া কোথায় কি ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
যে কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান ভীত হচ্ছে দেশের স্যবার্থে আপোষহীন ভুমিকা। দেশের স্বার্থে যে দল যত বেশী ছাড় দেয় তার ভিত তত দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাবেদার কোন দলের চাহিদা কি কোন দেশ খুব বেশী দিন থাকে? যে আওয়ামীলিগের অধিকাংশ মন্ত্রির কথা শোনলে উনারা বাংলাদেশের না ভারতীয় মন্ত্রি, বোঝা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়, এরকম একটা তাবেদার দলের চাহিদা এই ডিজিটাল যুগে কি খুব বেশী দিন থাকবে? বাজারে চাহিদা না থাকলে দল্টা টিকে থাকবে কেমনে?
দলের নেতা কর্মীদের সততা আর দক্ষতা  দলের অন্যতম ভীত । কথার ফুলজুরি ঝরায়ে কি কোন দল বেশী দিন টিকে থাকতে পারে, দক্ষতা আর সততা না থাকলে ? বর্তমান মন্ত্রিসভায় সততা ও দক্ষতা এই দুইটা গুন আছে , এরকম  একজন আওয়ামীলিগার মন্ত্রি আছে ?  মাইক্রস্কুপ দিয়ে খোজে বের করতে পারবেন? দুই একজন, যাদের  কেউ কেই সৎ আর দক্ষতার সার্টিফিকেট দিবে, তারা কিন্তু কেউ আওয়ামিলিগার না। তারা হচ্ছে সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা।  এখন নাই, কিন্তু ভবিষ্যত আওয়ামীলিগে নেতৃত্বে আসবে বলে মনে হচ্ছে, এমন কাউকে  কি আপনাদের নজরে পড়ছে যার বা যাদের মধ্যে এই দুইটি গুণ আপনার নজরে পড়ছে?
নেতা কর্মীদের চরিত্র, আচার ব্যবহার  দলের অন্য তম ভিত।  চরিত্র হারা কোন ব্যক্তি কি সমাজে সম্মানের সাথে, স্বাধীন ভাবে বেচে থাকতে পারে বেশী দিন?  ব্যক্তি যদি না পারে, এরকম ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত দল কি পারবে ?  কোন অপকর্মের  কথা বলবেন আপনি যেটাতে আওয়ামিলিগ চ্যাম্পিয়ান না? ধর্ষণ? খুন?  অত্যাচার ? যদি প্রশ্ন করা হয়, দেশে নারী নির্যাতন, ছাত্র-ছাত্রি নির্যাতন, শিক্ষক নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতন , সরকারী চাক্রীজিবি নির্যাতনে  চ্যাম্পিয়ান কোন দল ?  সব দলই কম বেশী এগুলি করে , কিন্তু চ্যাম্পিয়ান কোন দল ? আওয়ামীলিগ কে রেখে আপনি কি অন্য দলের নাম বলতে পারবেন? 
দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা  কোন দলে বেশী, ছাত্রলিগ, যুবলীগে না অন্য রাজনৈতিক দলে ? 
ধর্ষনে সেঞ্চুরীয়ান কি অন্য কোন দলের কাছে জামাই আদর পেয়েছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রহারকারীরা কি অণ্য কোন দলের কাছে থেকে  শাস্তি মওকুফ করে চাকরী ফেরত পেয়েছে? পাবনায় পরীক্ষা হলে কর্তব্যরত মহিলা ম্যাজিস্ট্রেটের গায়ে হাত তোলার মত বিশ্বে নজিরবিহীন একমাত্র ঘটনার নায়করা  কোন দলের  আর কোন সরকারের সময় দ্রুত জামিন  পেয়েছে ? 
 দলের মন্ত্রি এমপিদের  মনোরঞ্জনের জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  দলের নারী কর্মিদের সপ্তাহান্তে পাঠাতে হয়, এরকম বর্বরতা কি পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন দল পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন দেশে  করে ? 
 এরকম একটা চরিত্রহারাদের দল কি খুব বেশী দিন টিকে থাকবে, পারবে ২০২১, না হয় ২০৩১ পর্যন্ত ?  এই চরিত্রহারাদের   কি উন্নত চরিত্রে ফিরিয়ে নেওয়ার মত বা  উন্নত চরিত্রের লোকদের দলে  আকৃষ্ট করার মত  ভবিষত নেতা কি দল্টিতে দেখতে পাচ্ছেন ? যদি না পান, তাহলে আপনি এই চরিত্রহারাদের ভবিষত নিয়ে কিভাবে আশাবাদী হতে পারেন ?
নেতা কর্মিদের  দল আর দেশের প্রতি কমিটমেন্ট   দলের সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন ভীত ।  যাদের দেশের প্রতি কমিটমেন্ট আছে, তারা কি অন্য দেশের নাগরিকত্ব নেয়? যাদের দুই নৌকায় পা, তারা কি কোন নৌকার প্রতি কমিটেড হতে পারে ? বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণকারী এবং ভিনদেশী নারীর পাণি গ্রহণকারী সৈয়দ আশরাফ আর সোহেল তাজরা কি দল আর দেশের প্রতি যথাযথ কমিটমেন্ট দেখাতে পেরেছে? 
ওরা যদি না পারে,  বিদেশ বড় হওয়া, ভিনদেশী নাগরিকত্ব  ও জীবনসঙ্গী গ্রহণ কারী তৃতীয় প্রজন্ম  কি দল আর দেশের প্রতি যথাযথ কমিটমেন্ট  নিয়ে কাজ করতে পারবে? 
 এসব দুর্বলতা আর চারিত্রিক অধপতনের কারণে  আওয়ামিলিগ নামক দলটি  একদিকে যেমন  অস্তিতের সংকটে পড়েছে, অন্য দিকে দল টি দেশের জন্য ক্ষতিকর ও বিপদজঅঙ্ক হয়ে ঊঠেছে ঠিক যেমন ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলি প্রতিবেশী আর  পৃথিবীর জণ্য ক্ষতিকর ও বিপদজনক। 
দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে এই দল্টিকে হয় সংশোধন করতে হবে  না হয়  ধংব্স তরান্বিত করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ সংশোধন করতে পারবে না,  তবে প্ররোচিত করতে পারে। আর তা হচ্ছে, এই দলের প্রতিপক্ষ জাতীয়তাবাদী দল্গুলি যদি কন্টিনিউয়াসলি পজিটিভ এবং প্রো এক্টিভ  ভুমিকা রাখে  দেশের রাজণিতিতে, তার প্রতিক্রিয়ায় হয় এই দল টি সংশোধন হবে  আর না হয় দ্রুত ধংব্স হবে। ১৫ আগষ্ট বা ২১ আগষ্টের মত কোন প্রতিকিয়াশীল উপাইয়ে  এই দলকে ধংব্সের চেষ্টা হলে  তার ফল যেমন দেশের জন্য ভাল হবে না, অন্য দিকে দল্টি  জন সহানুভুতির কারনে সাময়িকভাবে ভাবে চাঙ্গা হবে, ধংব্স বিলম্বিত হবে।  
 
No comments:
Post a Comment